লিয়াকত আলী লাকী দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একজন প্রথিতযশা ব্যক্তি। নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, নাট্যকার, সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার এবং সর্বোপরি একজন আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে তিনি দেশ-বিদেশে বিপুল সুনাম অর্জন করেছেন। অকুতোভয় সঙ্গীতশিল্পী লিয়াকত আলী লাকী ১৯৭৫ এর পর সারাদেশে প্রতিবাদ ও জাগরণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের প্রথম সারির নাট্যদল ‘লোক নাট্যদল’ এর তিনি অধিকর্তা। ডাকসু’র সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শিল্পী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দল গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ পুন:প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনা করেন।
বাংলাদেশের শিশুনাট্য আন্দোলনের প্রধান পুরুষ তিনি। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২৬২টি শিশু ও যুব নাট্যদল সংগঠিত হয়ে নিয়মিত নাট্যচর্চা করে আসছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত পিপল্স থিয়েটার এসোসিয়েশনের কার্যক্রম সারা দেশজুড়ে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করেছে। ১৯৬৪ সাল থেকে নিয়মিত নাট্যচর্চা করে ৮৪টি নাটকে নির্দেশনা এবং ৬১টি নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক নাট্য সংগঠন আইয়াটা ও আসিটেজের বাংলাদেশের প্রতিনিধি। তাঁর নির্দেশিত ‘কঞ্জুস’ বাংলাদেশের সর্বাধিক মঞ্চায়িত নাটক এবং নির্দেশিত মহাকাব্যিক প্রতœনাটক ‘মহাস্থান’ নাটককে বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছে। দেশের প্রতœনাটকের ধারার প্রবর্তক এবং বাংলাদেশের বধ্যভূমিতে পরিবেশ থিয়েটার মঞ্চায়নে তাঁর ভূমিকা অনবদ্য।
বর্তমানে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে তিনি বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম এখন জেলা থেকে উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত। ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শিল্পের আলোয় মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক ব্যাপক শিল্পযজ্ঞ তিনি পরিচালনা করে আসছেন। ১৬ কোটি মানুষের জন্য শিল্পসংস্কৃতি এবং ৫৬ হাজার বর্গমাইলে শিল্পসংস্কৃতির আলো প্রজ্বলিত করে শিল্প-সংস্কৃতি-ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নিষ্ঠার সাথে কাজ করে চলেছেন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নাটককে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ভারত, জার্মানি, জাপান, কানাডা, কোরিয়া, কিউবা, ফিলিপাইন, গ্রীস, সুইডেন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মোনাকো, ফ্রান্স, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, নেপাল, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশ সফর করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক, মুনীর চৌধুরী পদক, কলকাতার ‘সমলয়’ কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিশুনাট্য পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গের ‘বাংলার মুখ’ কর্তৃক দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার, আসিটেজ সম্মাননা, আসাম সরকার ও ব্যতিক্রম কর্তৃক ‘ড. ভূপেন হাজারিকা ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড’, জাপানের তইয়ামা’র গভর্নর কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননাসহ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন।
শিল্পকলায়(অভিনয়) বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ জনাব লিয়াকত আলী লাকীকে ২০১৯ সালের ‘একুশে পদক’ প্রদান করা হয়।