Wellcome to National Portal
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৩১st মার্চ ২০১৯

দর্শকনন্দিত নাটক ‘হ্যামলেট’-এর ১৩তম প্রদর্শনী


প্রকাশন তারিখ : 2019-03-29
অভিমানী হ্যামলেট৩০ মার্চ ২০১৯ সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে হ্যামলেট নাটকের ১৩তম মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রযোজিত উইলিয়াম শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকটি অনুবাদ করেছন সৈয়দ শামসুল হক। নির্দেশনা দিয়েছেন মঞ্চসারথী আতাউর রহমান এবং প্রযোজনা উপদেষ্টা শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী। 
 
উল্লেখ্য, হ্যামলেট নাটকের গত কয়েকটি প্রদর্শনীতে মিলনায়তন দর্শকপূর্ণ হওয়ার বিষয়টি বর্তমান সময়ে নাট্যঙ্গনের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক। আগ্রহী দর্শকদের জন্য অনলাইনে টিকিট বুকিং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একাডেমির ফেইজবুক পেইজ থেকে নাটকের টিকিট বুকিং করা যাবে। 
 
নাট্যকাহিনি
উইলিয়াম শেক্সপিয়রের বিয়োগান্তক নাটক ‘হ্যামলেট’ রচিত হয় ১৫৯৯ ও ১৬০২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যকালীন। এই নাটকটি শেক্সপিয়রের সবচেয়ে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় নাটক হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। নাট্যকাহিনির সূচনা হয় ডেকমার্কের রাজা হ্যামলেটের মৃত্যুঘটনাকে কেন্দ্র করে, যিনি ছিলেন তরুণ যুবরাজ হ্যামলেটের পিতা। রাজার মৃত্যুর পর তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস [যুবরাজ হ্যামলেটের পিতৃব্য] সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং প্রয়াত অগ্রজের স্ত্রী [যুবরাজ হ্যামলেটের জননী] গারট্রুডের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। জনককে হারানোর ব্যথা, জননীর সাথে পিতৃব্যের পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হওয়া এবং সর্বোপরি পিতৃব্যের সিংহাসনে আসীন হওয়া ইত্যাদি যুবরাজ হ্যামলেটের জীবনের মর্মমূলে নাড়া দেয়; যুবরাজ শোকে-দুঃখে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েন। তিনি কিছুতেই এই দুর্বিষহ অন্যায় ঘটনাপ্রবাহ মেনে নিতে পারেন না। পিতার প্রেতাত্মা জীবনের এই দুঃসহ লগ্নে তার সামনে আবির্ভূত হয়ে তাকে জানিয়ে দেয় যে, যদিও প্রচারিত হয়েছে তিনি সর্পদংশনে নিহত হয়েছেন; আসল সত্য হল, তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্লডিয়াস কানে বিষ ঢেলে তাকে হত্যা করেছে। ঘটনা প্রবাহে আরো কিছু গ্রন্থি যুক্ত হয়। মন্ত্রী পলোনিয়াস হ্যামলেটের জননী রানি গারট্রুডের ঘরে মাতাপুত্রের কথোপকথন শোনার জন্যে আড়ি পাততে গিয়ে যুবরাজ হ্যামলেটের তরবারির আঘাতে নিহত হয়। হ্যামলেট তাকে রাজা ক্লডিয়াস ভেবে ভ্রম বশত হত্যা করে। পলোনিয়াসের কন্যা এবং যুবরাজ হ্যামলেটের প্রেমিকা ওফেলিয়া পিতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মনোবেদনায় ভেঙে পড়ে এবং জলে ডুবে আত্মহত্যা করে জীবনের যন্ত্রণা মেটায়। পিতা ও ভগ্নির মৃত্যুতে মন্ত্রীপুত্র লেয়ার্তেস প্রায় পাগল হয়ে পড়ে। রাজা ক্লডিয়াস ষড়যন্ত্র করে হ্যামলেট ও লেয়ার্তেসের মধ্যে তরবারির দ্বৈতক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। লেয়ার্তেসের তরবারির মাথায় বিষ মাখানো ছিল। সে বিষাক্ত তরবারির আঘাতে লেয়ার্তেস হ্যামলেটের ঊর্ধ্ববাহু রক্তাক্ত করে, হ্যামলেট লেয়ার্তেসেরই বিষাক্ত তরবারি দিয়ে তাকে প্রত্যাঘাত করে। রানি গারট্রুড তৃষ্ণার্ত হয়ে বিষাক্ত পানীয় পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন, যা হ্যামলেটের পান করার কথা ছিল। পাত্রে বিষ মেশানোটাও ছিল রাজা ক্লডিয়াসের ষড়যন্ত্র। রাজার সব ষড়যন্ত্র যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে, বিশেষ করে মৃত্যু পথযাত্রী লেয়ার্তেসের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে, তখন যুবরাজ হ্যামলেট রাজা ক্লডিয়াসকে তরবারি দিয়ে আঘাত করে এবং বিষ মেশানো পানীয় পান করতে বাধ্য করে এবং সে নিজেও প্রাণত্যাগ করে। এ-ভাবে চার চারটি জীবনের অবসান ঘটে তরবারি-ক্রীড়া প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে। হ্যামলেটের সার্বক্ষণিক অনুগামী প্রিয় বন্ধু হোরেশিও থেকে যায় পরবর্তী প্রজন্মকে এই বেদনা বিধুর কাহিনি শোনাবার জন্যে।
 
 
নির্দেশকের কথা
 
বিশ্ব বিখ্যাত নাটক হ্যামলেট
উইলিয়াম শেক্সপিয়র রচিত ‘হ্যামলেট’ বিশ্ববাসীর অতি পরিচিত এবং অতি আদৃত একটি বিয়োগান্ত নাটক। গত চার-শ বছর ধরে এই নাটকটি বিশ্বের অগণিত মঞ্চে বিরতিহীনভাবে অভিনীত হয়ে আসছে। মঞ্চে চলচ্চিত্রের উদ্ভব ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে। মূক চলচ্চিত্র যখন উন্নীত হল সংলাপ সম্বলিত চলচ্চিত্রে তখন ‘হ্যামলেট’ নাটকের কাহিনীকে উপজীব্য করে পৃথিবীর দেশে দেশে নির্মিত হয়েছে অসংখ্য চলচ্চিত্র। পরবর্তীকালে টেলিভিশন উদ্ভাবনের পরে বিবিসিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্প্রচার কেন্দ্রগুলো ‘হ্যামলেট’ভিত্তিক টেলিফিল্ম নির্মাণ ও সম্প্রচার করে। এখনও মঞ্চে, চলচ্চিত্রে এবং টেলিভিশন মাধ্যমে ‘হ্যামলেট’ অভিনীত হয়ে আসছে। বিশ্বের কীর্তিমান অভিনেতাগণ এই নাটকে কোনো না কোনো সময় অভিনয় করেছেন; যুক্ত হয়েছেন প্রতিভাবান কলা-কুশলীরা। বিভিন্ন দেশের অভিনেতাদের ‘হ্যামলেট’ নাটকের যে-কোনো চরিত্রে অন্তত একবার অবতীর্ণ হবার আন্তরিক অভিপ্রায় ব্যক্ত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। এই নাটকটি দেশে দেশে নব ব্যাখ্যায় ও দ্যোতনায় দর্শকদের কাছে উপস্থাপিত হয়ে প্রশংসিত হয়ে আসছে। এই নাটককে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেশের দার্শনিক, ভাষ্যকার ও সমালোচকেরা সর্বাধিক নাট্যভাবনার বিকাশ ঘটিয়েছেন তাঁদের লেখনীতে। এই নাটকে ব্যক্তি মানুষের অন্তর্গত ও নিত্যকার সংঘাতময় জীবনের আশা-হতাশার দোদুল্যমানতা অনুকরণীয় পারঙ্গময়তায় চিত্রিত হয়েছে। শেক্সপিয়রের অনন্য লেখনীতে মানুষের সমষ্টিগত জীবনের ইতি ও নেতির দ্বন্দ্বও বিবৃত হয়েছে নাটকে। 
আমাদের দেশের বহুপ্রভ কবি, লেখক ও নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক আজ থেকে এক বছরের কিছু আগে তাঁর অন্তিম শয্যায় অনন্য কুশলতায় শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’ নাটকটির মুক্ত অনুবাদ করেন। অনুবাদ কাজ সম্পন্ন করার কিছুদিন পরেই আমাদের সবাইকে কাঁদিয়ে অনন্তের যাত্রী হন তিনি। যাবার কালে রেখে যান আমাদের জন্য তাঁর অনন্য সৃজনভা-ার। শেক্সপিয়রের নাটক অনুবাদ ও রূপান্তরের ক্ষেত্রে উনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাঁর অনূদিত শেক্সপিয়রের ম্যাকবেথ, টেম্পেস্ট, ত্রয়লাস ও ক্রেসিদা এবং রূপান্তরিত নাটক ‘গণনায়ক’ আমাদের অনন্য নাট্যসম্পদ। 
‘হ্যামলেট’ নাটকে ডেনমার্কের যুবরাজ ‘হ্যামলেট’-এর জীবনযুদ্ধের দ্বন্দ্ব ও সংকটময় রূপ চিত্রিত হয়েছে যা কাহিনীবিন্যাস ও মর্মকথায় হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। আমাদের নাট্যকার সৈয়দ শামসুল হক তাঁর কোনো ব্যত্যয় ঘটাননি; তবে তাঁর প্রয়াস ছিল, শেক্সপিয়রের ‘হ্যামলেট’ যেন হয়ে উঠে বাঙালির ‘হ্যামলেট’ তথা বাংলাদেশের ‘হ্যামলেট’। তিনি নাট্যকাহিনীর কোনোরূপ পরিবর্তন না ঘটিয়ে গ্রথিত করেছেন মহান বাঙালি কবিদের কাব্যাংশ ও সঙ্গীত। পাশাপাশি এসেছে আমাদের নিজস্ব লোকজ পালাগানেরও নানা আঙ্গিক। নৃত্যেও সচেতনভাবে ব্যবহার করেছেন বাঙালির নিজস্ব নৃত্য-আঙ্গিক ও ভাবনা। আমি আশা করব, জগতখ্যাত নাট্যকার উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ৪০০তম মৃত্যুবার্ষিকী ও ৪৫২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সৈয়দ শামসুল হক কৃত ‘হ্যামলেট’ নাটকের অনূদিতরূপ মঞ্চায়নই হবে এই মহান নাট্যকারের স্মৃতির প্রতি আমাদের হৃদয় উৎসারিত অর্ঘ্য নিবেদন। 
সর্বশেষে বলব, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, কীর্তিমান অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক এবং সর্বোপরি কর্মিষ্ঠ পুরুষ লিয়াকত আলী লাকীর সার্বিক সহযোগিতা ও সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান ছাড়া এই নাটকের মঞ্চায়ন সম্ভব হত না। 
জয় হোক নাটকের, জয় হোক মানুষের সৃজনস্পৃহার। 
 
আতাউর রহমান
 
নাটকের চরিত্রসমূহে যারা রূপদান করেছেন-
হ্যামলেট : মাস্উদ সুমন
ক্লডিয়াস : শামীম সাগর 
গারট্রুড : সংগীতা চৌধুরী
পলোনিয়াস : আমিনুর রহমান মুকুল
লেয়ার্তেস : শফিকুল ইসলাম (শাফিক)/যোজন মাহমুদ 
হোরেশিও : মো: সোহেল রানা
ওফেলিয়া : মেহেজাবীন মুমু
প্রেতাত্মা : শরীফ সিরাজ
যাজক : বাপ্পি আমীন
বৃদ্ধা : তৃপ্তি রাণী মন্ডল
গোরখোদক : ফখরুজ্জামান চৌধুরী 
অমাত্য : সাঈদ রহমান, শরীফ সিরাজ, মেরিনা মিতু, শেখ তানভীর আহমেদ, সোহেল রানা
যাত্রাদলের রাজা : মো: সাইফুল ইসলাম মন্ডল/আজগর রাব্বী
যাত্রাদলের রানি : মেরিনা মিতু
প্রহরী : কুমার প্রাঙ্গন, তপন কুমার, আল-আমীন সোহাগ, সাইফুল ইসলাম, আহসান হবীব বিপু, 
  আতাউর রহমান
দাসী : ফারজানা কামাল মিম  স্বর্ণালী রায় পুতুল
যাত্রাদল : বাপ্পি আমীন, কুমার প্রাঙ্গন, ফারজানা কামাল মিম, শ্রেয়শ্রী সরকার, আহসান হাবীব বিপু
 আজগর রাব্বী, আতাউর রহমান
অসি পরিচালক : শরীফ সিরাজ 
পরিচারক : তপন কুমার, আহসান হাবীব বিপু , শামীম শেখ
নৃত্যদল : মেহেজাবীন মুমু, বাপ্পি আমীন, কুমার প্রাঙ্গন, ফারজানা কামাল মিম, শ্রেয়শ্রী সরকার, 
                                আহসান হাবীব বিপু, স্বর্ণালী রায় পুতুল, মেরিনা মিতু, সাইফ, তপন, আজগর রাব্বী, 
                                শামীম শেখ