সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
০৮ অক্টোবর ২০১৮
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় ভারতের প্রখ্যাত পাপেট থিয়েটার নির্দেশক পদ্মশ্রী সুরেশ দত্ত এর তত্বাবধানে ও নির্দেশনায় ৮-১২ অক্টোবর আয়োজন করা হয়েছে ৫দিনব্যাপী ‘সমকালীন পুতুলনাট্য কর্মশালা ২০১৮’। ৮ অক্টোবর ২০১৮ সকাল সাড়ে ১০টায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের প্রখ্যাত পাপেট থিয়েটার নির্দেশক পদ্মশ্রী সুরেশ দত্ত, শিল্পী মোস্তাফা মনোয়ার, শিল্পী কিরিটি রঞ্জন বিশ্বাস, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক সাইদুর রহমান লিপন, এবং একাডেমির সচিব মোঃ বদরুল আনম ভূঁইয়া ও বিভিন্ন বিভাগের পরিচালকবৃন্দ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। উদ্বোধনী আয়োজনের পরপরই শুরু হয় সমকালীন পুতুল নাট্য কর্মশালা। ৫ দিন্যাপী এই কর্মশালায় বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়েল শিক্ষার্থী ও ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন পুতুল নাট্যদলের শিল্পীসহ ৩০জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন।
কর্মশালার পাশাপাশি আগামী ৮ ও ১২ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬.৩০টায় একাডেমির জাতীয় সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে প্রখ্যাত পাপেট থিয়েটার নির্দেশক পদ্মশ্রী সুরেশ দত্ত এর নির্দেশনায় সর্বভারতের আলোড়ন সৃষ্টিকারী ক্যালকাটা পাপেটের প্রযোজনা ‘আলাদীন’ পাপেট থিয়েটার প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে।
‘আলাদীন’ কলকাতা পাপেট থিয়েটারের (১৯৭৩ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত পাপেট থিয়েটার দল) সেরা ও দর্শক নন্দীত একটি প্রযোজনা। কলকাতায় ও বিশে^র বিভিন্ন দেশে প্রযোজনাটির রেকর্ড সংখ্যক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৮০ সালে পোল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ^ পাপেট উৎসবে এটিকে বিশে^র সেরা পাপেট প্রযোজনা হিসেবে ঘোষনা করা হয়। পদ্মশ্রী সুরেশ দত্তের পরিচালনায় এটিতে লাইট ডিজাইন করেছেন তাপস সেন এবং সংগীত করেছেন ভি বালসারা ও পি এল চৌধুরী।
পুতুলনাট্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম
বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী ধারা হিসেবে লোকায়ত কাহিনী, রূপকথা বা গীতিকা পরিবেশনা আজও বাংলার লোক-সমাজে প্রচলিত রয়েছে। লোকশিল্পের গুরুত্বপূর্ন মাধ্যম হিসেবে বর্তমান বিশে^ আধুনিক শিল্পচর্চা ও গবেষণার ক্ষেত্রে পুতুলনাট্য একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে। বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নিকট কোনো তথ্য দ্রুত প্রচার, জনসচেতনতা তৈরী, গণশিক্ষা প্রসার, পণ্য বাজারজাতকরণের লক্ষে প্রচারণা প্রভৃতি কাজেও পুতুলনাট্যের প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও বিগত কয়েক দশক ধরে শিক্ষা, স্বাস্থ ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক মচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সংস্কৃতির এ মাধ্যমটি বিশেষ ভমিকা পালন করে যাচ্ছে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী পুতুলনাট্যকে সংস্কৃতির মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে এবং বিশ^ দরবারে তুলে ধরার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নিরলসভাকে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুতুলনাট্য ও এই শিল্পের শিল্পীদের মূল্যায়ন কর্মকা-ের অংশ হিসেবে চারজন পুতুলনাট্য শিল্পীকে অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। একাডেমির মাহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র পরিকল্পনায় ইতোমধ্যে পুতুলনাট্যের চারটি প্রযোজনা নির্মিত হয়েছে যা দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্মিত চারটি প্রযোজনার জন্য চারজন পুতুলনাট্য শিল্পীকে ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। গত ১১ জুলাই মহাপরিচালক নিজ কার্যালয়ে শিল্পীদের হাতে অনুদানের চেক তুলে দেন। এসময় নাট্যকালা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক বদরুল আনাম ভূঁইয়াসহ একাডেমির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুদানের অর্থ দিয়ে নতুন প্রদর্শনীর ব্যবস্থা ও পুতুলনাট্যের মান উন্নয়নে কাজ করবেন জলে জানিয়েছেন শিল্পীরা।
পুতুলনাট্য প্রদর্শনীর আয়োজন, কর্মশালা পরিচালনা, মুক্ত আলোচনা, এবং আন্তর্জাতিক পুতুলনাট্য উৎসবে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পুতুল নাট্যদলের নিয়মিত অংশগ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুতুলনাট্য ও এই শিল্পের শিল্পীদের মূল্যায়ন কর্মকা-েরই অংশ। এছাড়াও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি নিয়মিতভাবে বিশ^ পুতুলনাট্য দিবস উদযাপন করে আসছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী ও মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযদ্ধের উপর আরো চারটি নতুন প্রযোজনা নির্মানের জন্য চারজন লেখকের মাধ্যমে স্ক্রিপ্ত তৈরীর কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। তারা হলেন জাতীয় কবি কাজী জনরুল ইসলাম বিশ্বিবিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আল জাবীর ও সহকারী অধ্যাপক তোকদার বাঁধন, নাট্যকার তানভীর আহমেদ সিডনী, পুতুলনাট্য শিল্পী ও উপস্থাপক তামান্না তিথি।